Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মৌচাষে স্মল হাইভ বিটল প্রতিরোধে করণীয়

মৌচাষে স্মল হাইভ বিটল প্রতিরোধে করণীয়
জুবায়ের আহমেদ
বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন মৌমাছির উপকারিতা বুঝাতে গিয়ে বলেছিলেন ‘ওভ ঃযব নবব ফরংধঢ়ঢ়বধৎবফ ভৎড়স ঃযব ংঁৎভধপব ড়ভ ঃযব মষড়নব, ঃযবহ ঃযব সধহ যধাব ড়হষু ভড়ঁৎ ুবধৎং ঃড় ষরাব (যদি মৌমাছি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়, তবে মানুষের জীবন পরবর্তী চার বছরেই শেষ হয়ে যাবে)’। পৃথিবীর প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ খাদ্য উৎপন্ন হয় মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে। যৌবন ধরে রাখতে মধু খাওয়ার বিকল্প নেই, কারণ মধু হলো একমাত্র খাদ্য যাতে পিনোসেমব্রিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। মৌচাক থেকে মধু ও মোম ছাড়াও উপজাত হিসেবে পাওয়া যায় রয়েল জেলি, পোলেন, মৌ বিষ, প্রপেলিস ইত্যাদি। বাজারদর ও চাহিদা বিবেচনায় মধু ও মোম থেকে উপজাতগুলোর দাম অনেক বেশি। এ পর্যন্ত প্রায় ১৩৬ প্রজাতির গাছের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যা থেকে মৌমাছি নেকটার ও পোলেন সংগ্রহ করে। তন্মধ্যে সরিষা, লিচু, খলিশা, কুল, তিল, কালোজিরা, সূর্যমুখী, ধনিয়া উল্লেখযোগ্য।
মৌচাষের ইতিহাস অনেক প্রাচীন হলেও আধুনিক মৌচাষ মূলত শুরু হয় ১৮৫১ সালে ল্যাংস্ট্রোথ নামে এক বিজ্ঞানীর হাত ধরে। আমাদের দেশে প্রায় ২৫ হাজার মৌ চাষি রয়েছেন। দেশে বার্ষিক ৩০ হাজার টন মধুর চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১০ হাজার টন মধু দেশে উৎপাদিত হয়। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপের কারণে মৌচাষ শিল্পে পরিণত হতে যাচ্ছে। রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে প্রকৃতিতে ফুলের প্রাপ্যতা থাকলেও মূলত বর্ষাকালে এর প্রাপ্যতা কমে আসে। তাই মধ্য জুন হতে মধ্য অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ সময়কাল মৌচাষে ডার্থ পিরিয়ড নামে পরিচিত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সব ঋতুতেই মৌবাক্সে একটি পোকা মৌ চাষিদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোকাটির নাম ঝসধষষ ঐরাব ইববঃষব (অবঃযরহধ ঃঁসরফধ), যা ঈড়ষবড়ঢ়ঃবৎধ বর্গের ঘরঃরফঁষরফধব গোত্রের অন্তর্গত। পোকাটি প্রথমে ১৯৯৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়। পরবর্তীতে এটি কানাডা, যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে বিস্তার লাভ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশের (ডার্থ পিরিয়ডে) বিভিন্ন জেলায় মৌ-বাক্সে এ পোকার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, যে পোকাটি বাংলাদেশে পাওয়া গিয়েছে তা এই পোকার এশিয়ান সাব স্পেসিস। এই পোকার পৃষ্ঠীয় অংশে সূক্ষ্ম লোম থাকে যার ফলে সহজে এদের কলোনি থেকে আলাদা করা যায় না। পিঠে শক্ত আবরণ থাকার কারণে মৌমাছি এদের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারে না। অনকূল পরিবেশ ও শারীরিক গঠনের কারণে আগামীতে এটি মৌচাষে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জীবন চক্র
পূর্ণাঙ্গ পোকা মৌ কলোনি শনাক্ত করে তাতে প্রবেশ করে। এরা মৌ বাক্সের ফাটল/ছিদ্র খুঁজে বের করে সেখানে ডিম পাড়ে। একটি স্ত্রী পোকা তার জীবদ্দশায় গড়ে ১,০০০টি ডিম পাড়তে পারে। ডিমগুলির বেশির ভাগই তিন দিনের মধ্যে ফুটে বাচ্চা (গ্রাব) বের হয়। সদ্য ফোটা গ্রাবগুলো মৌচাকের মধু, পোলেন এবং মৌমাছির লার্ভা খাওয়া  শুরু করে। ১০-১৬ দিনের মধ্যে এরা মাটিতে পুত্তলী গঠন করে। বিচরণ পর্যায়ে লার্ভা উপযুক্ত মাটি খুঁজে পেতে মৌচাক থেকে অনেক দূরে ঘুরে বেড়াতে পারে। তা সত্ত্বেও, বেশির ভাগ লার্ভা মৌচাকের ৯০ সেন্টিমিটারের মধ্যে পুত্তলী গঠন করে। প্রায় ৮০% গ্রাব মাটির উপরিভাগ থেকে ১০ সেন্টিমিটারের কম দূরত্বে মাটিতে পুত্তলী গঠন করে। মাটির তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে পুত্তলীর সময়কাল ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পোকা পুত্তলী থেকে বেরিয়ে আসে এবং উপরিউক্ত প্রক্রিয়ার পুনারাবৃত্তি ঘটে।
শনাক্তকরণ
সাধারণত পরিদর্শনের মাধ্যমে এই পোকা সহজেই শনাক্ত করা যায়। মৌ বাক্স খুলে ১০ মিনিট সূর্যালোকে রাখলে পূর্ণবয়স্ক বিটলগুলো ছোটাছুটি করতে থাকে। মৌচাকের মৌমাছিদের মধ্যে শৃঙ্খলা থাকে না। লার্ভা প্রায়ই মৌচাকের কোণে বা ফ্রেমে দলবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। আক্রান্ত মৌচাক থেকে মধু পড়তে থাকে। মধুতে পচা কমলার গন্ধ পাওয়া যায়।
ক্ষতির ধরন
পোকাটির জীবন চক্রের চারটি ধাপের মধ্যে কীড়া (গ্রাব) মূলত ক্ষতি করে থাকে। গ্রাব মৌচাকের মধ্যে সঞ্চিত মধু ও পোলেন খাওয়া শুরু করে। এতে মৌচাকের ক্যাপিং এবং কম্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লার্ভার ক্রিয়াকলাপের ফলে মধু নষ্ট হয়ে যায়। তা থেকে একটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত গন্ধ বের হয়। খাবার সংকটের কারণে মৌচাকে মৌমাছির সংখ্যা কমে যায়। এতে একদিকে যেমন মৌমাছির সংখ্যা কমে যায়, অপরদিকে মৌচাক থেকে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় না। আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে মৌমাছি বাসস্থান পরিত্যাগ করে। মৌমাছির মৌ কলোনি ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রতি কলোনিতে গড়ে ১০০০টির বেশি প্রাপ্তবয়স্ক পোকা থাকতে হয়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
যেহেতু এই পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন পদ্ধতি দেশে এখনও সহজলভ্য নয়। তাই নিয়মিত পরিদর্শন ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই পোকার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। নিচে কিছু বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হলো-
নিয়মিত মৌ-বাক্স পরিদর্শন করা, যাতে এই পোকা দেখামাত্রই প্রাথমিক অবস্থাতে নিয়ন্ত্রন করা যায়; ২-৩ দিন পর পর নিচের তলা/বটম বোর্ড পরিষ্কার করতে হবে; আক্রমণ বেশি হলে একটি পরিষ্কার ফ্রেমে আক্রান্ত বাক্সের মৌমাছি স্থানান্তর করা এবং সম্ভব হলে হাত দিয়ে পূর্ণাঙ্গ পোকা, গ্রাব ধরে মেরে ফেলা; উন্নতমানের মৌবাক্স ব্যবহার করা যাতে কোন ফাটল/ছিদ্র না থাকে। এক্ষেত্রে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা ফসল উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প (৩য় পর্যায়) এর সরবরাহকৃত বাক্সগুলো মডেল হিসেবে নেয়া যতে পারে; মৌবাক্স সরাসরি মাটিতে স্থাপন না করা। মৌবাক্স সবসময় মাটি হতে খানিকটা উপরে স্থাপন করা; যেহেতু এই পোকা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৌবাক্সের কাছাকাছি স্থানের মাটিতে পুত্তলী গঠন করে, তাই ঐ স্থানের মাটি কিছুটা আলগা করে দিলে, পুত্তলী বাইরে বের হয়ে আসবে; মৌবাক্স পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। মৌবাক্সে চারপাশ থেকে মধু, কম্ব এবং ক্যাপিং অপসারণ করতে হবে যাতে এই পোকা আকৃষ্ট হতে না পারে; আক্রমণের তীব্রতা ও ক্ষতি কমাতে চাকে মধু জমা হয়ে গেলে ১-২ দিনের মধ্যে দ্রুত সংগ্রহ করা। কারণ ক্যাপিং করা মধু পূর্ণাঙ্গ পোকা ও লার্ভাকে আকৃষ্ট করে; মধু ঘর এবং অন্যান্য স্থানে যেখানে মধু সংরক্ষণ করা হয় সেখানে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫০% এর কম রাখলে তা ডিম ফুটতে বাধা দেয়; এই পোকা মোকাবিলা করার জন্য এপিয়ারিতে দুর্বল কলোনিগুলো অপসারণ করা বা শক্তিশালী করা উচিত। এর জন্য কলোনিতে ব্রুড রোগ, মাইট সমস্যা, দুর্বল রানী ইত্যাদির সুষ্ঠু সমাধান করা; আক্রান্ত কলোনিতে সুপার চেম্বার থাকলে তা অপসারণ করার ব্যবস্থা করা; ডার্থ পিরিয়ডে কলোনিতে যেন পুষ্টির ঘাটতি না হয় সেজন্য পোলেন, চিনির পানি (১:১) ও পানির উৎস নিশ্চিত করা; সাধারণত এই পোকা পুত্তলী গঠনের জন্য আদ্র, আলগা ও বেলে মাটি পছন্দ করে সেক্ষেত্রে এটেল দোআঁশ বা এটেল মাটিতে মৌ বাক্সগুলো রাখলে আক্রমণ কম হতে পারে। আমাদের দেশে প্রচলিত না হলেও বিভিন্ন দেশে এই পোকার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যহার করা হচ্ছে।
স্মল হাইভ বিটল পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ইন-হাইভ ফাঁদ যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। যেমন: হুড ট্র্যাপ, ফ্রিম্যান বিটল ট্র্যাপ, ওয়েস্ট ট্র্যাপ, এজে বিটল ট্র্যাপ, সনি মেল ট্র্যাপ, টঝউঅ বিটল ট্র্যাপ ইত্যাদি। হুড বিটল ট্র্যাপ যেখানে এটিকে মৌবাক্সের ফ্রেমে লাগিয়ে দেয়া হয়। তাতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে (আকর্ষক) ভরা থাকে এবং আটকা পড়া পোকাকে মারার জন্য ঐ ফাঁদে খনিজ তেল (কিলিং এজেন্ট) থাকে। অন্যান্য ফাঁদগুলোও সাধারণত একই নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
মাটিতে বসবাসকারী দুই প্রজাতির নেমাটোড (ঝঃবরহবৎহবসধ ৎরড়নৎধাব ও ঐবঃবৎড়ৎযধনফরঃরং রহফরপধ) এই পোকার বিরুদ্ধে কার্যকরী। উপকারী নেমাটোডগুলোকে (পারমেথ্রিন) মাটিতে প্রয়োগ করা হলে, পোকামাকড়ের সন্ধানে নেমাটোডগুলো নিচের দিকে গর্ত করে। একবার একটি পোকা পাওয়া গেলে, নেমাটোডগুলো পোকার শরীরে প্রবেশ করে এবং একটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়া ছেড়ে দেয়া যা দ্রুত কীটপতঙ্গকে মেরে ফেলে। নির্গত ব্যাকটেরিয়া পোকার অভ্যন্তরীণ টিস্যু দ্রবীভূত করে যা নেমাটোডের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য খাদ্য হয়ে ওঠে। পরিপক্ব নেমাটোড তারপর সঙ্গম করে এবং ডিম পাড়ে যাতে মৃত পোকার মধ্যে আরও নেমাটোড তৈরি হয়। এই ধরনের বেশ কয়েকটি প্রজন্ম মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ঘটতে পারে। পোকামাকড়ের অভ্যন্তরে খাওয়ার পরে, ক্ষুদ্র সংক্রামক পর্যায়ের নেমাটোডগুলো মৃত পোকার খোসা ছেড়ে দেয় এবং আরও কীটপতঙ্গের সন্ধান শুরু করে। মাত্র ১০-১৫ দিন পর একটি মৃত পোকা থেকে প্রায় ৩,৫০,০০০ নেমাটোড বের হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসে ঈড়ঁসধঢ়যড়ং নামক এক ধরনের রাসায়নিক স্ট্রিপ মৌ কলোনিতে ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় ৪৫ দিন পর্যন্ত এই স্ট্রিপ কার্যকর থাকে। প্রতি হাইভে ১টি করে স্ট্রিপ ব্যবহার করা হয়।
এই পোকা নিয়ন্ত্রণে রাখার কার্যকরী পদ্ধতি বের করতে গবেষণা চলমান রয়েছে। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি এর কার্যকরী কোন ব্যবস্থাপনা মৌচাষিদের কাছে সহজলভ্য হবে। তাই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্ন চাষাবাদের মাধ্যমে বর্তমানে আমাদের এই পোকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অন্যথায় মৌচাষের মতো সম্ভাবনাময় একটি শিল্প হুমকির মধ্যে পড়তে পারে, যা দেশের আর্থসামাজিক খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

লেখক : অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা, নরসিংদী সদর, নরসিংদী। মোবাইল: ০১৬৭৪৯২৬৪৩৭, ইমেইল: jubayergepbsau@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon